বিভিন্ন কারনে আমাদের ত্বক উজ্জ্বলতা হার ফেলে। প্রতিদিনের ধুলোবালি,ময়লা জমে আর রোদে পুড়ে আমাদের ত্বক হয়ে যায় মলীন।সেই সাথে বায়ু দূষণের প্রভাবও কম না!তাছাড়া ঘুম কম হওয়াও কিন্তু আপনার ত্বকের ঔজ্জ্বল্য হারানোর কারন। কিন্তু ত্বকের উজ্জ্বলতা হারিয়ে বসে থাকলেই চলবে না করতে হবে ত্বকের যত্ন।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে অনেকেই বাজারে বিক্রি হওয়া ক্রিমের উপর নির্ভর করেন। যা থেকে সাময়িক উজ্জ্বলতা বাড়লেও ক্ষতির পরিমানই বেশি। কারন বেশিরভাগ ক্রিমেই রয়েছে মার্কারী বা পারদের মত রং ফর্সাকারী ক্ষতিকর উপাদান। যা ত্বকের মেলানিন স্তরকে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ত্বকের চামড়া পাতলা করে দেওয়ার পাশাপাশি, স্কিন ক্যানসার এর সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় বহুগুন। তাই প্রকৃতিক উপায়ের উপর নির্ভরশীলতাই দিতে পারে আপনাকে প্রকৃত সৌন্দর্য।
আজ আমরা জানবো কীভাবে সহজেই কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় -
১. ঘন ঘন পানি পান করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
পানি যেমন আমাদের তৃষ্ণা মেটায় ঠিক তেমনি আমাদের দেহ ও ত্বককে সজীব ও সতেজ রাখে। বেশি বেশি পানি পান করলে আমাদের দেহ থেকে ক্ষতিকর উপাদান আপনাআপনি বের হয়ে যায়। যা আমদের ত্বককেও ডিটক্স করতে সহায়তা। এছাড়াও পানি আমাদের ত্বকের তারুন্যতা ধরে রাখে।
২. ঘন ঘন মুখ ধৌত করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
সারাদিন বাহিরে থাকার পর যখন ঘরে ক্লান্ত হয়ে ফিরি তখন হাতমুখ ধোয়া টাও যেন বড় বিরক্তি। যত বিরক্তির কাজ ই হোক না কেন আপনাকে অবশ্যই ফেসে জমে থাকা সারাদিনের ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। এই ময়লা শুধু পানি দিয়ে যাওয়ার কথা না। তাই ত্বক বুঝে সঠিক ক্লিনজার ব্যবহার করুন। এছাড়াও সুযোগ পেলে সারাদিনে কয়েকবার মুখ ধুয়ে নিন। এতে আপনার ত্বক থাকবে সতেজ।
প্রাকৃতিক কিছু জিনিস ব্যবহার করেই কীভাবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে পারেন জেনে নেই-
শসাঃ ত্বকের যে কোনও ধরনের প্রদাহ নিমিষেই কমিয়ে দিতে পারে শসার যার ব্যবহার বহুল প্রচলিত। চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল দূর করতেও শসার রস দারুন কার্যকর। এছাড়াও শসার রস বিভিন্ন ফেসপ্যাকে ব্যবহার করা যেতে পারি কিংনা সরাসরি লাগানো যেতে পারে, যা আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সক্ষম।
টোমেটোঃ টোমেটোতে থাকা লাইকোপিন ত্বকে তারুন্য ভাব ধরে রাখতে বেশ কার্যকর। এ ছাড়াও টমেটোতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়াতে সক্ষম। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার টোমেটোর ফ্যাসপ্যাক ব্যবহার করতে পারে। ফেসপ্যাকে মিশিয়ে নিন খানিকটা ওটমিল যাতে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে ঝকঝকে পরিষ্কার। সময় ফেসপ্যাক শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন তারপর ধুয়ে, ময়েশ্চরাইজার লাগিয়ে নিন। তবে রোদে যাবার আগে অতি অবশ্যক সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না যেন।
চন্দনঃ ত্বকের ঔজ্জ্বল্যতা বাড়াতে জুড়ি নেই চন্দনের ! চন্দন কাঠে রয়েছে টাইরোসিনেস। টাইরোসিনেস ত্বকে মেলানিনের উৎপাদন সামান্য কমিয়ে দিতে পারে। ফেসপ্যাকের জন্য চন্দন পাউডারের সাথে আমন্ড পাউডার, দুধ মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন, এতে আপনার ত্বক একেবারে ঝলমলিয়ে উঠবে! এই ফেসপ্যাক সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করা যায়। তবে প্রথমবার চন্দন ব্যবহার এর আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করয়ে নিন আপনি চন্দন পাউডারে এলার্জিক কিনা।কারন অনেকেরই চন্দনে অ্যালার্জি হয়। তাদের এটি ব্যবহার না করাই উত্তম।
হলুদ: ত্বকের যত্নে হলুদের ব্যবহার চলে আসছে আদিকাল থেকেই। এর নিয়মিত ব্যবহার আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা ধীরে ধীরে বাড়িয়ে তুলবে। তাই আপনার ফেসপ্যাকে রাখতে পারেন হলুদ বা হলুদের গুড়া। তবে হলুদ লাগিয়ে রোদে না যাওয়াই উত্তম।
এলোভেরা : বর্তমানে ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা ব্যবহার করেন না এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে।এর পাতার মাঝ থেকে শাঁসটা বের করে নিন।এলোভেরা জেলের সাথে হলুদ আর লেবুর রস দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন। এই ফেসপ্যাক এক দিন অন্তর অন্তর ব্যবহার করুন। আধা ঘণ্টা রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার মুখের ময়েশ্চারাইজার এর কাজ করবে সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও বাড়াবে।
লেবুর রসঃ লেবুর রসকে বলা হয় প্রকৃতিক ব্লিচ কারন এটি ত্বকের দাগ ও কালো ভাব দূর করতে সক্ষম। কিন্তু মনে রাখবেন, লেবুর রস সরাসরি ত্বকে লাগানো যাবেনা । কারনে এতে রয়েছে এসিড যা ত্বককে সাঙ্ঘাতিক সেনসিটিভ করে তোলে, পরে তীব্র জ্বালাভাবও অনুভব করতে পারেন। তাই সরাসরি মুখে লেবুর রস না লাগিয়ে তা আপনার ফেস প্যাকের সাথে ব্যবহার করুন যাতে আপনি পাবেন অন্যতম ফলাফল। দুধ, বেসন বা আটার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে তৈরি করা যেতে পারে ফেস প্যাক যা সাধারণত সব ধরনের ত্বকেই জন্যই ভালো কাজ করে। তবে লেবুর রসের ফেসপ্যাক লাগানোর পর অবশ্যই ভালো কোনও ময়েশ্চরাইজ়ার লাগান। তা না হলে আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
এভাবে সঠিক পন্থায় ত্বকের যত্ন নিলে আপনিও ফিরে পেতে পারেন ত্বকের উজ্জ্বলতা